পদত্যাগের ঘোষণা ছাড়া সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয় : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৃহস্পতিবার , ০৬ July ২০২৩

পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা ছাড়া সরকারের সঙ্গে বিএনপি কোনো সংলাপে যাবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে করেন তিনি।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সংলাপের সুযোগ নেই। তারা (বিএনপি) যদি সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তাহলেই কেবল সংলাপ হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কোনো ফর্মেটেই সংলাপে যেতে চাই না, যতক্ষণ না এই সরকার ঘোষণা দেবে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এই ঘোষণা তাদেরকে পদত্যাগ করেই দিতে হবে। এটা ছাড়া কোনো সংলাপের প্রশ্নই ওঠবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করলে সকল মানুষ খুশি হয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক। সমস্যা তো নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে এলে আমরা আওয়ামী লীগকে স্বাগত জানাব। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবেন এবং বলবেন তিনি সব ত্যাগ স্বীকার করবেন- সেটা তো এক নয়।’

আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের ওপর নির্ভর করবে জাতির অস্তিত্ব থাকবে কি-না, স্বাধীনতা থাকবে কি-না, জাতি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তৈরি করতে পারবে কি-না। এই জন্য আমরা বলেছি, এই নির্বাচনটা অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে এবং এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘উনারা (সরকার) সংবিধানের কথা বলেন। তারাই সংবিধান বারবার কেটে-ছেটে এমন একটা জায়গায়ে নিয়ে এসেছেন যে, ওটার অধীনে নির্বাচন এখনে কোনো সুযোগ নাই।’ 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে ফিরে আসার জন্য, মুক্তি পাওয়ার জন্য দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আমরা প্রায় ৩৬ রাজনৈতিক দল একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছি।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের আন্দোলন একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এই বছরটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বছরই আওয়ামী লীগ আবারও একটা পাতানো নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই নির্বাচন কখনও এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই- এই সরকার বা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার তার অধীনে কোনো নির্বাচনকে জনগণ গ্রহণ করবে না। আমাদের তরফ থেকে জনগনের যে দাবি উঠেছে তা হচ্ছে- নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তার পূর্বে এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে  হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সকলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে আমরা আমাদের কর্মসূচিগুলোকে নিয়ে আলোচনা করেছি। কর্মসূচি কী কী হতে পারে তা আলোচনা করেছি। পরবর্তীতে জনগণকে এসব বিষয় আমরা জানাব।’ 

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘পরবর্তী কর্মসূচি ও তার রূপরেখা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বাদেও যেসব জোট ও দল রয়েছে তাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছে।’ 

১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আমরা এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করব। কখন থেকে শুরু করব, কারা কারা থাকবে তা সব শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আমাদের দাবি একটাই- বর্তমান সরকার কবে যাবে।’ 

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু।

১২ দলের পক্ষ থেকে ছিলেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে ওলামায় ইসলামের মহাসচিব মুফতি গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম, ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাগপার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব আবদুল করিম, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি সভাপতি ড. সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মাদ সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন। 


আর্কাইভ