জোবাইদারও নির্বাচনের দরজা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বুধবার , ০২ আগষ্ট ২০২৩

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। বুধবার (২ আগস্ট) আদালতের দেওয়া রায়ে তারেকের ৯ বছর ও জুবাইদার ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

 

অর্থ পাচার মামলা ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে তারেক রহমান দণ্ডিত। এবার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তার সঙ্গে দণ্ডিত হলেন জোবাইদা রহমান। যা তার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার রায়। 

আলোচনায় জোবাইদার নির্বাচন 

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিদেশে পলাতক দণ্ডিত তারেক রহমানও সেই সুযোগ পাননি। মামলা থাকলেও সাজা না হওয়ায় আলোচনায় ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোবাইদার অংশগ্রহণের বিষয়। তবে প্রথম কোনো মামলায় দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তার সেই পথ বন্ধ হয়ে গেল। 

আইনে যা আছে

সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে উচ্চ আদালত থেকে সাজা বাতিল বা স্থগিত করা হলে তখন নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রেও জোবাইদার জন্য বাধা রয়েছে। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর আদালত কারাগারে পাঠানোর পর আপিল করার সুযোগ পাবেন জোবাইদা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, কেউ নৈতিক স্খলনের দায়ে দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে জোবাইদার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পরে কারাগারে গিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। আপিলে দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হলে তবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন তিনি।

যে কারণে দণ্ডিত জোবাইদা

আয় ছাড়াও ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালে ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। জোবাইদার আবেদনে একই বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন হাইকোর্ট। রুলের বিরুদ্ধে দুদক আবেদন করলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল জোবাইদার আবেদনও খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই মামলায় ৮ সপ্তাহের মধ্যে জোবাইদাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে একই বছর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন জোবাইদা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই আবেদন খারিজ করে দেন। জোবাইদার মা ইকবাল মান্দ বানু মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গত বছরের ১ নভেম্বর আদালত তারেক-জোবাইদা দম্পতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল তাদের বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালে তারেক ও জোবাইদাকে পলাতক দেখানো হয়।

২১ মে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। এদিন তার সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। মামলাটিতে অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৬ জনের মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ২৭ জুলাই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

পলাতক কেন তারেক-জোবাইদা দম্পতি

তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি হয় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। পরে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আবেদন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিন পান তারেক। ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক। এ কারণে মামলা চলাকালে তারেক রহমান ও জোবাইদাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।


আর্কাইভ