রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল তাহির ও ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলামের নিহতের ঘটনায় পৃথক ৩টি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা এসব মামলা করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে বিচারকরা সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত তাজহাট সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার ও সাবেক ডিআইজিসহ ১৭ জনের নামে আরেকটি মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী সাংবাদিকদের বলেন, নানা কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে। আমরা এই হত্যা মামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মামলার আবেদনে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৈয়দ আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়।
অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির (২৮) হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নিহত তাহিরের বাবা মো. আব্দুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি (ক্রাইম) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) মো. নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতয়ালী থানার ওসি মোন্তাসির বিল্লাহ।
এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবলু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হক প্রমানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সাবেক সদস্য সদস্য (সংরক্ষিত) নাছিমা জামান ববি, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদাৎ হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কানা হারুন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষ্মীণ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, জেলা যুবলীগের নেতা ডিজেল আহমেদ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ সনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. মানিক, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজাহানুর ইসলাম সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তানিম আহসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আসিফ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. মামুনের নামও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাত অভিযুক্ত করা হয়েছে আরও ২০-৩০ জনকে।
রংপুরের কোতোয়ালি মেট্রো থানার কগনিজেন্স আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই রংপুর মহানগর সিটি বাজার এলাকায় ছাত্র জনতার সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন আব্দুল্লাহ আল তাহির।
অপর দিকে ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত কোতোয়ালিতে দায়ের করা এ মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও অনেককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ মামলার অভিযুক্তরা হলেন- রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার রায়, সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান আরিফ, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন, গণেশ, মজনু, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদাৎ হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ।