সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদুল হক রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বুধবার , ০৪ সেপ্টেম্বর ber ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকের সাত দিন এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আট দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় শহীদুল হকের ও মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানদার আবু সায়েদ হত্যা মামলায় মামুনের এ রিমান্ড দেয়া হয়।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আকতারুজ্জামানের আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেন।

এদিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাদের ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। শহিদুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন নিউমার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোরাদ খান। মামুনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোক্তারুজ্জামান।

আদালতে প্রথমে শহীদুল হকের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানির এক পর্যায়ে তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীন আদালতকে বলেন, তিনি ২০১৮ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর সরকারি আর কোনো লাভজনক পদে থাকেননি। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের অভাবনীয় উন্নয়ন সাধন করেন এবং জনগণের ভরসার জায়গায় নিয়ে গেছেন। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি একজন বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। এ সময় তিনি শহীদুল হকের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

এজলাসে ওঠানোর পর আদালতের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক। তিনি বলেন, আমি পুলিশ প্রধান থাকতে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করিনি। পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে গিয়েছি। যতদিন চাকরি করেছি, মানুষের সেবা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনোটাই সত্য নয়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

অপরদিকে, রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে কোনো কথা বলেননি সদ্য সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি আদালতের এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় ঠাঁই দাড়িয়ে আইনজীবীদের বক্তব্য শুনতে থাকেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। 

তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আসামি মামুন চাকরিরত অবস্থায় পদাধিকার বলে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশকে কমান্ড করেছেন। তার ব্যাক্তিগত কোনো পদক্ষেপ পুলিশের কাছে ন্যাস্ত হয়নি। তাকে যদি মামলা দিতেই হয় সেক্ষেত্রে এসব হত্যা মামলা দেওয়া অনুচিত। তিনি চাকরি জীবনে কোনো অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হতে পারে। আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তাকে হয়রানি করতেই এই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার পরিবার একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবার। তারা সমাজসেবামূলক অনেক কাজ করেছেন, তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি হার্টের রোগী, চোখে কম দেখেন এবং ডায়াবেটিসের রোগী।

আসামিদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে এ মামলায় তার আট দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে তাদের গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে কোটা আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে মোহাম্মদপুর থানার বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ নিহত হন। এ ঘটনায় ১৩ আগস্ট  এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। 

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকালে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশের গুলিতে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মারা যান। এ ঘটনায় তার শ্যালক আব্দুর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।


আর্কাইভ