৩৮১ কিলোমিটার মহাসড়ক নিয়ন্ত্রনে ১৬ স্পিড গ্যান, জনবল সংকটে বাড়ছে দূর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : মঙ্গলবার , ২১ মার্চ ২০২৩

হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনে জনবল সংকটে মামলা দিয়েও নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা গতি, বাড়ছে দূর্ঘটনা

এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি : হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনে থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প রয়েছে সাতটি, যার মাধ্যমে আটটি মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রন করা হয়। প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে মোট ১৬ স্পিড গ্যান রয়েছে এসব মহাসড়কের গতি নিয়ন্ত্রনে। এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রায় সকল সড়কেই যানবাহন চলাচল তিন থেকে পাঁচগুন বৃদ্ধি পেলেও সে অনুপাতে বাড়েনি জনবলসহ অন্যান্য সাপোর্ট। ফলে পুরোনো কাঠামোর জনবল দিয়েই বাড়তি কর্মচঞ্চলতাকে সামলাতে হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশকে। হাইওয়ে পুলিশের দাবী, অতিরিক্ত গতির বাহনগুলোকে মামলা দিয়েও কমানো যাচ্ছেনা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালানোর প্রবনতা। তারা মনে করেন, গতি কমাতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যবক জনসচেতনা গড়ে তোলার বিকল্প নাই।  

ফরিদপুরে অবস্থিত মাদারীপুর হাইওয়ের রিজিওনের দ্বায়িত্বরত পুলিশ সুপারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, এই রিজিওনের অধিনে এন-৮, এন-৮০৫, এন-৮০৪, এন-৭, এন-৮০৬, আর-৭১০ ও আর-৮৬০ মহাসড়কের তিনশ ৮১ কিলোমিটার মসহাসড়ক রযেছে। যার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েও অন্তর্ভুক্ত।

রিজিওনের পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সহকারী পুলিশ সুপারের দপ্তরসহ আটটি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে পুর্বে থেকেই মোট জনবল রয়েছে দুইশ ৬৫ জন। যার মধ্যে পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন ৬০জন, আর ১৫জন রয়েছেন প্রধান কার্যালয়ে প্রেষনে। পুলিশ ষ্টেশনগুলোর মধ্যে পাংশা হাইওয়ে থানায় সর্ব নিম্ন ২১জন এবং ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় সর্বোচ্চ ৩৪জন কর্মরত আছেন। বেশীর ভাই থানাতেই একজন ওসি, একজন সার্জেন্ট ও একজন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। যার মধ্যে শুধুমাত্র এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাই দূর্ঘটনা জনিত মামলার তদন্ত করতে পারেন।  

 

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার যোগযোগের নতুন দ্বার খুলে যাওয়ায় এসব মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ গুন। যদিও ব্যবস্ততা বাড়লেও এসকল পুলিশ ষ্টেশনগুলোতে বাড়েনি জনবলের সংখ্যা। এমনকি আটটি ষ্টেশনে মাত্র দুটি করে স্পিডগ্যান থাকায় এবং জনবল বৃদ্ধি না করায় একাধিক চেকপোস্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাড়ায়। কারণ এসব ষ্টেশনের অধিনে সর্বনিম্ন শিবচর হাইওয়ে থানার অধিনে ২৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে যার উভয় প্রান্ত বিবেচনায় ৫৬ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অধিনে ৭৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে।     

 

মাদারীপুর হাইওয়ের রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, মহাসড়কে যান চলাচলে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা থাকলেও, অনেক চালকই তা মানছেন না। তিনি জানান, ২০২২ সালের ০১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত অত্র রিজিওনের অধিনে চেকপোস্ট বসিয়ে আট হাজার ৯২টি মামলা রুজু করা হয়। যার মধ্যে তিন হাজার চারশ ৯২টি মামলাই অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালানো সংক্রান্ত। এতো মামলা রুজু করার পরও কেনো কেপরোয়া গতি থামানো যাচ্ছেনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মনে করেন, সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি মালিক-কর্তৃপক্ষের দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্টান্ডে পৌছানোর চাপই দায়ী। তাই দ্রুত গতিতে গাড়ী চালানোর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ব্যবক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরোনো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। 

উল্লেখ্য, মাদারীপুর রিজিওনের অধিনে ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত দুইশ ২২টি দূর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু নিয়মিত মামলা হয়েছে ৩৭টি। এসব দূর্ঘটনায় মারা গেছেন দুইশ ৬৪জন এবং আহত হয়েছেন তিনশ সাত জন।

রোববার এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় ইমাদ পরিবহন দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর মহাসড়কে দ্রুত গতির যানবাহন নিয়ন্ত্রনে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।


আর্কাইভ