এরদোয়ান আবারও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সোমবার , ২৯ মে ২০২৩

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান রবিবার ঐতিহাসিক রানঅফ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। গত দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকাকালে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবারই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এরদোয়ান।

 

বিজয়ী ঘোষণার পর এরদোয়ান ইস্তাম্বুলে তার নিজ এলাকায় একটি বাসের উপরে থেকে তার উল্লাসকারী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আগামী পাঁচ বছর দেশ শাসন করব। আল্লাহর ইচ্ছা, আমরা আপনার আস্থার যোগ্য হব।’ আগামী পাঁচ বছরের জন্য তুরস্কের দায়িত্ব হাতে দেওয়ার জন্য এরদোয়ান ভোটারদের ধন্যবাদ জানান। 

এ সময় এরদোয়ানের সমর্থকদের তুরস্কের পতাকা ও এরদোয়ানের দল একেপির পতাকা হাতে উল্লাস করতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিদেশের কয়েকজন নেতা এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানান বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

এরদোয়ান তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিকদারোগলুকে তার পরাজয়ের জন্য উপহাস করে বলেন, ‘বাই বাই বাই, কামাল।’  এ সময় সমর্থকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এরদোয়ান বলেন, ‘আজ একমাত্র বিজয়ী তুরস্ক।’ 

এরদোয়ানের বক্তব্য দেওয়ার সময় তুরস্কের প্রধান শহরগুলো উল্লাসে ফেটে পড়ে। ইস্তাম্বুলের আইকনিক তাকসিম স্কয়ার মাঠে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আঙ্কারায় তার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে বিপুল জনতা জড়ো হয়।

বাংলাদেশ সময় গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়। তাতে দেখা যায় এরদোয়ান পেয়েছেন ৫২.৩ শতাংশ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিকদারোগলু পেয়েছেন ৪৭.৭ শতাংশ ভোট।

গত ১৪ মে প্রথম রাউন্ডের ভোটেও এরদোয়ান তার ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী কিরিগদারোগলুর থেকে এগিয়ে ছিলেন। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট কেউ না পাওয়ায় গতকাল রানঅফ ভোট অনুষ্ঠিত হলো।

কিলিকদারোগলু এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী জোট গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

বিরোধী সমর্থকেরা এ নির্বাচনকে তুরস্ককে স্বৈরাচারে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচানোর সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। 

ভোট দেওয়ার পর কিলিকদারোগলু বলেন, ‘আমি আমার সব নাগরিককে এই স্বৈরাচারী শাসন থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং এই দেশে সত্যিকারের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আনতে ভোট দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ 

রবিবার (২৮ মে) স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

ভোটের মাত্র তিন মাস আগে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প দেখেছে দেশটি। সেটিতে প্রাণ হারিয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় ধীর গতির কারণে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়ে এরদোয়ান সরকার। ফলে ভোটের আগে ভিত নড়বড়ে হয়ে যায় তাদের। সে সময়ের জনমত জরিপগুলো ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ানের পরাজয়ের ইঙ্গিতই দিয়েছিল।

দ্বিতীয় দফার ভোট যাতে সুষ্ঠু হয়, সেজন্য বিরোধী দলের চার লাখেরও বেশি স্বেচ্ছ্বাসেবককে নিয়োজিত করা হয়। তাদের দায়িত্ব ভোটের সময় ব্যালট বাক্সে এবং ভোট শেষে গণনায় ও ফলাফল ঘোষণায় নজর রাখা। 

অটোমান সাম্রাজ্য-পরবর্তী প্রজাতন্ত্র তুরস্কের ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ফলপ্রসূ নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে এবারের এই নির্বাচনকে। এই নির্বাচনে তুরস্কের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নেতা এরদোয়ান সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি  


আর্কাইভ